বাংলা সাহিত্যের অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্র হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর খবর কলকাতার বাংলা দৈনিকগুলোতে উপেক্ষিত থেকেছে। সংবাদটি কলকাতার দৈনিকগুলো ছোট্ট করে ছেপে দায় সেরেছে যেন। বিষয়টিকে পশ্চিমবাংলার ‘দাদা বাবু’দের হীনমন্যতা হিসেবেই দেখছেন বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকরা।
গত ২০ জুলাই কলকাতার জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘এক নজরে’ শীর্ষক কলামের শিরোনাম ছিল ‘প্রয়াত কথাকার হুমায়ূন আহমেদ’। ঢাকার নিজস্ব প্রতিবেদকের বরাত দিয়ে ছাপানো এ রিপোর্টটি মাত্র ৯ লাইনের। ওই একদিনই খবর ছেপেছে তারা।
ওই রিপোর্টে তারা লিখেছে- ক্যানসার কেড়ে নিল বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদকে (৬৪)। বৃহস্পতিবার রাতে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় রসায়নের প্রাক্তণ শিক্ষক এবং পরবর্তীকালে শীর্ষস্থানীয় কথাকার হুমায়ূনের। শেষ সময়ে পাশে ছিলেন স্ত্রী মেহের আফরোজ।
‘নন্দিত নরকে’ দিয়ে যাত্রা শুরু। হুমায়ূনের উপন্যাসের সংখ্যা দু’শ’রও বেশি। নাট্যকার হিসেবেও জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। পরিচালনা করেন কয়েকটি ছবিরও। তবে তিনি স্মরণীয় হয়ে হয়ে থাকবেন ‘বেস্টসেলার উপন্যাসের নিপুণ শিল্পী হিসেবেই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে জুড়ি নেই তার।

কিন্তু ওই পর্যন্তই। এরপরের সংখ্যাতে নন্দিত এ সাহিত্যিককে নিয়ে কলকাতার সবচেয়ে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় এ দৈনিকে কোন রিপোর্ট নেই।
আনন্দবাজারের চেয়ে কলকাতার দৈনিক আজকাল একটু বড় করে রিপোর্ট ছাপে ২০ জুলাই। তবে প্রকাশিত রিপোর্টে ভুল তথ্য দিয়েছে তারা। রিপোর্টটিতে দু’বাংলায় জনপ্রিয় এ কথা সাহিত্যিকের স্ত্রী-কন্যা ও পুত্রের সংখ্যায় ভুল হয়েছে। বয়স লিখেছে ৬৩ বছর।
যদিও কলকাতার আর এক দৈনিক সকাল বেলা ২১ জুলাইয়ের গুয়াহাটি সংস্করণে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে পূর্ণ পৃষ্ঠার বিশেষ আয়োজন গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে।
তবে বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রয়াগে ২১ ও ২২ জুলাইয়ের সংখ্যায় হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কোন রিপোর্টই নেই।
কলকাতার প্রথম সারির বাংলা কাগজগুলোর এমন ভূমিকায় ক্ষেপেছেন ময়মনসিংহের বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিকরা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে কবি শামসুল ফয়েজ বাংলানিউজকে বলেন, “এভাবে বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তিসম লেখককে অবজ্ঞা করে দাদা বাবুরা নিজেদেরই ছোট করেছেন। প্রমাণ দিয়েছেন তারা ছোট হৃদয়ের অধিকারী।”
ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারা সুলতানা আনু বলেন, “সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও সমরেশ মজুমদারের চেয়েও হুমায়ুন আহমেদ অনেক জনপ্রিয় লেখক। কলকাতার বইমেলাতে হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের জন্য ঢল নামতো পাঠকদের। এ কিংবদন্তির অকালপ্রয়াণের ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে না ছেপে দাদারা নিজেদেরই খাটো করেছেন।”
কলকাতার সংবাদমাধ্যম সব সময়ই বাংলাদেশের শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির খবর প্রকাশে হীনমন্যতার পরিচয় দেয় অভিযোগ করে ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত দৈনিক মাটি ও মানুষের সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক আশিক চৌধুরী বলেন, “আমাদের পত্রিকায় আমরা পাশের দেশের দাদাদের খবর গুরুত্বের সঙ্গে ছাপলেও আমাদের বেলায় তারা বরাবরই কৃপণ।”
তিনি আরও বলেন, “এপার বাংলা, ওপার বাংলায় সমান জনপ্রিয় ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগতের এ নক্ষত্রের বিদায়ের খবরটি দিতেও ভারতীয়রা কৃপণতা করেছে। তাদের এ হীনমন্যতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। নক্ষত্র পুরুষদের সম্মান জানানোর অভ্যাস করা উচিত।”
No comments:
Post a Comment